একাকীত্বের অন্ধকারে একটি হৃদয়ের আশা।

একাকীত্বের অন্ধকারে একটি হৃদয়ের আশা।






 


নদীর ধারে ছোট্ট একটি গ্রাম ছিল, সেখানে বাস করত দুই বোন - পম্পা ও তৃষা। পম্পা ছিল বড় বোন, আর তৃষা ছিল ছোট বোন। দুজনের মধ্যে ছিল দারুণ বন্ধুত্ব। তাদের বাবা-মা ছোটবেলাতেই মারা যান, তাই পম্পা ও তৃষা একে অপরের ভরসা হয়ে বেঁচে ছিল।

পম্পা সবসময় চেষ্টা করত ছোট বোনের সব চাওয়া পূরণ করতে। তৃষা খুব ভালো ছবি আঁকত, আর তার স্বপ্ন ছিল একদিন বড় শিল্পী হবে। পম্পা জানত, গ্রামে থেকে তৃষার স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব নয়। তাই সে কঠোর পরিশ্রম করে টাকা জমাতে লাগল, যাতে তৃষাকে শহরে পাঠিয়ে আঁকা শেখানোর ব্যবস্থা করতে পারে।

একদিন পম্পা সিদ্ধান্ত নিল, শহরে গিয়ে সে একটি কাজ করবে আর সেই টাকা দিয়ে তৃষার জন্য একটি ভালো ছবি আঁকার স্কুলে ভর্তি করবে। তৃষা প্রথমে রাজি হতে চায়নি, কারণ সে তার বোনকে ছেড়ে থাকতে পারবে না। কিন্তু পম্পার ইচ্ছা এতটাই প্রবল ছিল যে শেষ পর্যন্ত তৃষা রাজি হল।

পম্পা শহরে গিয়ে চাকরি শুরু করল। সে রোজ নিজের খাবারের খরচ কমিয়ে টাকা জমাতে লাগল। তৃষাও গ্রামে পম্পার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। প্রতিদিন সে আঁকা প্র্যাকটিস করত, যেন পম্পার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।

একদিন, কয়েক মাস পর, পম্পা ফিরে এলো গ্রামে। সে তার সাথে নিয়ে এলো শহরের একটি নামকরা স্কুলে ভর্তি হওয়ার কাগজপত্র। তৃষা খুশিতে কেঁদে ফেলল। পম্পা বলল, “তুই আমার স্বপ্ন। তোর স্বপ্ন পূরণ হলেই আমার স্বপ্ন পূর্ণ হবে।”

তৃষা শহরে গিয়ে আঁকা শিখতে শুরু করল। সে তার আঁকায় গ্রাম, পম্পার কষ্ট, তাদের শৈশবের স্মৃতি ফুটিয়ে তুলত। কয়েক বছর পর তৃষা বড় শিল্পী হয়ে উঠল, তার নাম অনেকেই জানত। তৃষা যখন প্রথম প্রদর্শনী করল, তখন সে তার সব ছবি উৎসর্গ করেছিল তার বোন পম্পার নামে। কারণ পম্পার ত্যাগ আর ভালোবাসা ছাড়া তার স্বপ্ন কখনো পূরণ হত না।

পম্পা ও তৃষার গল্পটি ভালোবাসা, ত্যাগ আর বন্ধুত্বের গল্প। তারা বুঝেছিল, বোনের ভালোবাসা পৃথিবীর সব সুখের থেকে বড়।


Read More 

1 comment :

Copyright © storybook2050. Designed by OddThemes