কান্নার রাত

                                             কান্নার রাত


এক সন্ধ্যা, একদম নিঃসঙ্গ একটি গ্রামে ঘটল এক অদ্ভুত ঘটনা। গ্রামের সকলেই জানতেন, রাতের বেলা সেই পুরনো পুকুরের কাছে যাওয়া নিষেধ। সেখানকার পুকুরের জল যেন এক অন্ধকার, রহস্যময় ভুতের গুহা। কেউ জানতো না, সেই পুকুরে আসলে কী লুকানো রয়েছে, কিন্তু গ্রামের প্রাচীন মানুষরা বলতেন, "যে সেখানে যায়, সে আর ফিরে আসে না।"

এক রাতে, এক যুবক, রাহুল, তার সাহসের দম্ভে পুরনো গুজবগুলোকে উপেক্ষা করে পুকুরের দিকে রওনা হলো। পুকুরের ধারে পৌঁছেই তার মনে হল যেন চারপাশে অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। একটা ঠান্ডা হাওয়া গায়ে লাগল, যা তাকে তাড়িয়ে বেড়াল। পুকুরের জল জ্বলজ্বলে ছিল, যেন কিছু একটা তার দিকে তাকিয়ে আছে।


রাহুল নিজের সাহস দেখাতে কিছুটা এগিয়ে গেল। আচমকা, এক শীতল কন্ঠে তার নাম ডাকলো। “রাহুল…” সেই কন্ঠ যেন পুকুরের গভীর থেকে আসছে। ভয়ে তার হৃদপিণ্ড বেগ বাড়তে লাগল, কিন্তু সাহস নিয়ে সে বলল, “কে সেখানে?”

“আমি…” কণ্ঠস্বরটি আরও স্পষ্ট হল, “আমি এখানে, জলেই।” পুকুরের জল থেকে একটা মুখ উন্মুক্ত হলো, আর রাহুলের চোখ সঙ্কুচিত হয়ে গেল। মুখটি ছিল অদ্ভুত, চোখ দুটি যেন খালি, অথচ ভয়াবহ। সেই মুখটি বলল, “আমি অপেক্ষা করছিলাম। তুমি কি আমাকে দেখতে আসেছ?”

রাহুলের পা পিছিয়ে যেতে লাগল, কিন্তু সে জানত, ফিরে যাওয়ার পথ নেই। “আমি… আমি শুধু…", সে বলতে গিয়ে আটকে গেল। সেই মুখের হাসি ছিল ভয়ঙ্কর, যেন কেবল হত্যা আর অভিশাপ ছড়িয়ে পড়ছে।

“তুমি এখানে এসেছ, এখন তোমার হাতে কোনো পথ নেই। এই পুকুরের জল তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে,” সেই ভুতের কণ্ঠস্বর যেন গর্জন করছিল। আর তার কথা শুনে পুকুরের জল কাঁপতে শুরু করল, যেন এক ভীতিকর ঢেউ উঠছে।


রাহুল কাঁপতে কাঁপতে পেছনে হাঁটতে লাগল, কিন্তু পুকুরের জলে ধীরে ধীরে যেন কিছু একটা আসছে। ভয়াবহ ভাবে জলে এক অস্পষ্ট অবয়ব স্পষ্ট হতে লাগল। সে বুঝতে পারল, সে শুধু ভয়ের কারণ নয়, বরং সে সেই দুঃখিত আত্মার মুক্তির হাতিয়ার।

“পুকুরের জল আমাকে চুষে নিচ্ছে,” সে আর্তনাদ করল। কিন্তু তখনও তার পায়ের দিকে সেই অদ্ভুত মুখ আসছে। সে বুঝতে পারল, সে আর ফিরতে পারবে না।



সেদিন রাতে গ্রামের সবাই শুনল, রাহুল আর ফেরেনি। পুকুরের জল আবার আগের মতো শান্ত হয়ে গেল, কিন্তু সবাই জানে, রাত হলেই সেই কান্নার আওয়াজ ওঠে। “রাহুল…”

গ্রামবাসীরা আবার নতুন করে সতর্ক হলো, পুকুরের কাছে যাওয়ার কথা চিন্তাও করবেন না। কারণ রাতের অন্ধকারে, কান্নার সেই ভয়াবহ কন্ঠস্বর আবার ফিরে আসবে।


Read More




Post a Comment

Copyright © storybook2050. Designed by OddThemes